মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

Iraki poet Abdul Hadi Sadoun's poems in Bengali translation


ইরাকি-স্পেনিশ কবি ও অনুবাদক 
আব্দুল হাদি সাদৌনের কবিতা

আব্দুল হাদী সাদৌনের (Abdul Hadi Sadoun) জন্ম  ১৯৬৮ সালে ইরাকের বাগদাদে। বর্তমান নিবাস স্পেনে। ১৯৯৩ থেকে প্রবাসে থিতু হয়েছেন। ১৯৯৭ থেকে সম্পাদনা করেন আরবি ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্য বিষয়ক জার্নাল আালবাহ্(Alwah)। এ জার্নালের বিশেষত হলো, এতে প্রবাসী আরব কবি লেখকদের লেখাই প্রাধান্য দিয়ে ছাপা হয়। তিনি ওখানকার বেশ কটি অ্যাকাডেমিক সেন্টারে আরবি সাহিত্যের ওপর অধ্যাপনা করেন। বক্তৃতা করেন হিপ্পানিক সাহিত্যে আরব সংস্কৃতির প্রভাব ও উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে। তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ স্পেনিশ সাহিত্যকর্ম আরবি ভাষায় এবং আরবি সাহিত্যকর্ম স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদ করেছেন। যেমন অ্যান্তোনিও মাচাদো, ভিসেন্ট আলেক্সান্দ্রে, গর্সিয়া লোরকা, জোয়ান র‌্যামন জিমনেজ, হোর্হে বোর্হেস, আলবার্তি প্রমুখ। লাতিন আমেরিকার ছোটগল্প ও আধুনিক স্পেনিশ কবিতা। তার নিজের কিছু গল্প-কবিতাও ইংরেজি স্পেনিশ, জার্মান, ফ্রেন্স, ইতালিয়ান, ফার্সি, কুর্দিস কাটালান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ কবির সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্বের সুবাধে তার কবিতাগুলো আমি পেয়েছি।
তার প্রকাশিত বইসমূহ হলো: আরব ও স্পেনিশ ভাষার বই: দ্য ডে ওয়ারস অ্যা স্যুট স্ট্যাইন্ড রেডশী-১৯৯৬, ফার্মিং অব লাফটার-১৯৯৮, শীত ছাড়া কিছু না-২০০০, মৃত মাছেরা- ২০০২ ইত্যাদি।


নিস্তেজ মাছেরা

ঝর্ণাটিতে নিস্তেজ মাছেরা জড়ো হয়
প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় পরস্পর থেকে উষ্ণতা পাবার আশায়।
তারা সম্ভবত বিস্মিত ও হতবাক হয়
যখন আমি হেঁটে যাই ঝর্ণাটির পাশ দিয়ে
নতুন স্যুটকোট আর কাপড়ের তৈরি আমার ত্বক দেখে
তারা কী ভাবে কে জানে?
বাতাসের পাখির ডানা ঝাঁপটানোয়
কুঞ্চিত কাতর হয় আমার পোশাক।

প্রতিদিন বাসে আমি তাদের
দেখতে দেখতে যাই
একটি লোক সর্বদা ঝর্ণাটির দিকে ঝুঁকে থাকে
তার কাজ পাথরগুলো পলিশ করা

আমার ভাবনা হয়, নিস্তেজ মাছেরাও
কী ভাবে, নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে?
কিন্তু তারা তো সাঁতারই কাটতে জানে না।

এই মুহূর্তটি

এই মুহূর্তটি
এবং তার ছায়া
রূপ নিয়েছে আমার।

এটি লালরঙের
আমি ডুবেছি তার লালীমায়
এই মুহূর্তেই;

রূপকালঙ্কারে আঘাত করছে
এর বিস্মৃতি
দেয়ালগুলোর বিপরীতে,
অতৃপ্তিই
পছন্দ তাদের
যেমন পছন্দ তলদেশ, অশেষ।

এই মুহূর্তটি ক্ষণমধ্যেই
হারিয়ে গেলÑঅতল গহŸরে
যেতে যেতে বিরবির করল
কুকুরের পরিচারকদের দম্ভও
ক্ষণস্থায়ী খুব,
চিৎকার, চ্যাঁচামেচি, অবশেষে
ভাঙাচূরা একটি ডিস্কের মত
দোষণ ছড়ায় শব্দে।

শুনতে পাই
মুহূর্তটির বিদায়ী পদশব্দ
এটি আসে, যায়
আর আমি থাকি
অপেক্ষায়।

মেঘেদের ভিড়ে

মেঘেদের ভিড়ে
যখন আমায় আবিষ্কার করলে তুমি
আমার দেখভালে ছিল
আমারই নিরবতা
আর মৃত্যু নির্জনতা;

আমার আত্মার প্রদর্শনীতে
ওরা ডাকছিল আমায়
নাম না ধরে
কারণ, আমি যে পারি না
সাড়া দিতে

পদক্ষেপ

বিবর্ণ আয়নায়
আমার পদক্ষেপগুলো তরল হয়
এরপর গড়িয়ে যায় অতল গহŸর সন্ধানে
যা রয়েছে নির্দোষ-নিখাদ
এখনো..

শূন্যগর্ভ

তোমার কল্পনা
শীর্ষ থেকে হুড়মুড়িয়ে
ভেঙে পড়ছে
আমার দেয়ালে ওপর
অন্যেরা যখন
অবিরাম ঘুরছে
ফাঁকা একটি বৃত্তের চারপাশে।

বিবর্ণ আয়নায়

বিবর্ণ আয়নায়
প্রতিটি পদক্ষেপ দিই
তরলের সঙ্গে মিলেমিশে
একাকার হয়ে
অনুসন্ধান করতে বের হই
অতল গহŸরের
এখানো চাই
দোষণমুক্ত হোক
জীবন।

তাইগ্রিসের কাছে

আমার আগমনকালে
এখানে, যেখানে আমি তাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম
তাইগ্রিসের কাছে,
আমার মা জিজ্ঞেস করলেন:
-পুত্র, এত দূরে গিয়ে, কী করবে তুমি?
তুমি যা বলবে, লোকেরা কি তা বুঝবে?
তোমার ভাষা কি তারা জানে?
আমাদের মুখ,
আমাদের বেদনা?
তারা কি জানে, তুমি কে?
আমরা কি কেউ হই তাদের?
দূরবর্তীতা জনিত
কত না পার্থক্য
ভিন্ন তীরবর্তী ভূমির।
-আমার সম্পর্কে তাদের বলো
এই ঘরের বারান্দা
বাড়ির উঠোন,
তোমার ফেরার পথ চেয়ে
চিরদিন যারা অপেক্ষা করবে।
শেহরাজাদের বিস্ময়কর গল্পটিও
তাদের বলো। সেও তো ছিল
বাগদাদেরই মেয়ে।
-বাগদাদের দুর্বৃত্ত আর চোরদের গল্প
তাদের ধ্বংস
এবং পুনর্জন্ম সম্পর্কে
অথবা একেবারে চুপ থেকো
কথা ভুলে যাওয়ার মত
যদি পূনর্জন্মে কিংবা অনস্তিত্বে
বিশ্বাস না থাকে?

সেই কাফেলার কথা বলো
মৃতদেহ বহনকারীদের কাফেলা

-পুত্র, তুৃমি কি তোমার মাথা
লুকিয়ে ফেলবে ভূমিতে
অস্ট্রিচ পাখির মত
এত অশ্রæ লুকাতে না পেরে?

-এরপর সেই কাফেলা সম্পর্কে বলো
সাদ্দাম যাদের কবর দিয়েছিল
বালিতে
যেখানে মরেছে তোমার ভাই
ওখানেই সমাধিস্থ সে
চিরদিনের জন্য,
শুকনো পাতার বিছানায়।

তোমার পিতা সম্পর্কে বলো
তোমার চাচা,
আর আমাদের গরীব প্রতিবেশী সম্পর্কে
তার পুত্র সম্পর্কেও
বুশের ট্যাঁঙ্ক বহর
কীভাবে বাগদাদকে মাটির সঙ্গে মিশিয়েছে,
যদিও সবকিছুসহ
শহরবাসী শান্তিই প্রত্যাশার করেছিল।

-মা, আমার মাথা লুকোনোই আছে
কারণ তাদের আঙুল তোলা
আমার দিকে।
আমাকে উড়ার অনুমতি দিন
যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাই না
কোনো আগ্রহও নেই
যেখানে নিজেদেরই গিলে খাচ্ছে তারা
অন্তহীন অতীত থেকে।
-না,
আমাদের যাত্রা সম্পর্কে
আপনাকেও বলব না, মা।
আমি শুধু সামনের দিকে তাকাব
গ্রীষ্মে
এবং এই পথ
তারা আমার বেদনা দেখতে পাবে।




কোন মন্তব্য নেই :