Translation-Urdu poet Zehra Nigah and her poems


উর্দু কবি জেহ্‌রা নিগাহ্‌ এবং তাঁর কবিতা
ভাষান্তর-গাজী সাইফুল ইসলাম

কবি জেহ্‌রা নিগাহ্‌র (Zehra Nigah) জন্ম ১৯৩৫ সালে পাকিস্তানে সমসাময়িক পাকিস্তানি মহিলা কবিদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী কবি তিনি কল্পনার উৎকর্ষ আর ভিন্নধারার সৃজনশীলতা জন্য গত কয়েক দশক ধরে তিনি পাকিস্তানের জনপ্রিয় কবিদের একজনে পরিণত হয়েছেন আবার সমালোচিত হচ্ছেন স্পষ্টবাদীতার জন্য পাকিস্তানি কবিতার ঐতিহ্যবাহী ধারার মধ্যে থেকেও তিনি পুরনো উর্দু কবিতার কাব্যালঙ্কারে নিজের কবিতাকে অলঙ্কৃত করেন নি বরং সমকালীন বক্তব্য চিন্তার তীব্রতার জন্য পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের কাব্য সাহিত্যাঙ্গনে তিনিও পাকিস্তানের অপরাপর কবি যেমন কিশোয়ার নাহিদ, ফাহ্‌মিদা রিয়াজ এমনই আরও অনেকের মতো সমান গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছেন সৃজনশীল শিল্পের হাত ধরেই তাঁর কবিতায় আসে রাজনৈতিক বক্তব্য ফলে তরুণ সমাজেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেক আবার কথাও সত্য যে, চিন্তায় তিনি যতই আধুনিক হন না কেন তাঁর প্রেরণার মূল উৎসও মূলত আল্লামা ইকবাল, তকি মির ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ 
প্রবাসী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করলেও এই কবির কবিতা সম্পর্কে আমরা কম জানি ১৯৯৮ সালে লাহোরের আসাতির প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ শ্যাম কা পহেলা তারা (দি ফার্স্ট স্টার ইন ইভিনিং বা গোধূলির প্রথম তারকা) কাব্য গ্রন্থটি তিন অধ্যায়ে বিভক্ত প্রতিটি অধ্যায় থেকে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে তাঁর রচনাকালের বিভিন্ন পরিবর্তন মোড় বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন ওখানকার বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর লেখা প্রায়শই প্রকাশিত হয় এখানে আমরা তাঁর কয়েকটি কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করলাম



জেহ্‌রা নিগাহ্‌র কবিতা

বিচার

(সেই অন্ধ মেয়েটির উদ্দেশ্যে যাকে দুর্‌রা মেরে হত্যা করা হয়েছিল)
অবরুদ্ধ আমি,
কিন্তু মুক্ত
এই ছোট্ট ঘরে;
সূর্য হামাগুড়ি দেয়
সিলিংয়ে ঝুলানো দরজা পথে
অস্ত যাবার আগে
ছড়িয়ে যায় শেষ আলো,
প্রবেশে হিসেবী,
কিন্তু যে পথ তারা তৈরি করে,
সেই পথে বাড়ি ফিরি আমি;
এমনকি আমার বাবা, এই মুহূর্তে
যিনি ফিরছেন
শহর থেকে,
আমার জন্য নিয়ে আসছেন শাল-চিরুনি-চুড়ি-সুর্মা
হয়তো  আরও অনেক কিছু;
একই সঙ্গে আমার ভাইয়ের জন্যও
মসজিদে যে পড়ে,
যেমনটি তারা করে থাকে;
খোদাসক্ত
তারা পড়ে আর স্মৃতি থেকে আওড়ে যায়;
আমার বোন বাঁধাছাদা করে ভরে রাখে ঝুড়ি,
আমার অংশের রুটি দিয়ে;
চড়ুইদের খেতে দেয়
ভোরে;
আমার মা এক ধরনের পাগলী
জড়ো করেন পাথর
অথবা কথা বলেন চড়ুইয়ের সঙ্গে
যখন তারা শস্যের কণা কুড়িয়ে খায়;
তিনি বলেন:
চড়ুইরা যখন সত্যের তল পাবে
তাদের ঠোঁট আর নখের নাগালে
পাথরগুলোয় দেবে তা;
হয়তো তখন ওই পাথর থেকেই
উত্থিত হবে একটি ক্রোধান্ধ ঝড়
সেই ঝড় চূরমার দেবে বিচারকের আসন
আর অশ্রুর নদী বইয়ে দেবে ধর্মবেত্তাদের চোখে;
নিজেদের শাস্তি তখন নিজেরাই তারা করবে বিধান,
সর্বশক্তিবান আল্লাহ,
একজনের জন্য যেমন সবার জন্য তেমনই,
শ্রদ্ধেয়, মহামান্বিত,
আমার মাকে আমি কেমন করে বলব যে,
আমিই কাবা,
খোদার ঘর

ফেরা

চলছে সংস্কৃতির জোয়ার, একই দোকান এখন রমরমা
সড়কসমূহে মোড়ানো অলঙ্কৃত ইতিহাস;
হাতের ওপর সটান শোয়া
অথবা ধনুক বাঁকা ঘাড়
কোণে কোণে, সেই একই গাছ
আকস্মিক দমকে চমকে উঠে চঞ্চল আলো
কর্মব্যস্ত শহরটির পথে পথে,
যেখানে একদা আমরা বাস করতাম
ছিলাম অস্থির, উদ্বিগ্ন,
তোমার মন ছিল শান্ত আর সন্তুষ্ট
নিজেকেই সঙ্গী করে হারিয়ে যেতে;
নিরব প্রতিশ্রুতির শিকলে
বন্দী ছিলাম আমি
অবশেষে কাঠুরে হয়ে 
জঙ্গলে নিলাম আশ্রয় একাকীত্বের কাছে
নিঃশর্ত,
এভাবেই স্বপ্নের ঘর
একদিন,
ভেঙ্গে পড়েছিল আমার ওপর
তাসের ঘরের মতো
নিজেকে নিয়ে পালিয়ে
বেঁচেছিলাম কোনোরকম,
তার অনেক পরে
সেই একই শহরের দিকে
ফিরে চললাম আমি;
সেই একই সড়কে প্রায়শই যেখানে ইতস্তত ঘুরে বেড়িয়েছি
একই বাগানে যেখানে কাটিয়েছি বহু অলস সময়;
তোমার স্বভাব বেড়ে উঠেছে আমার মাঝে
এখন আমিও শান্ত, সন্তুষ্ট
নিজের সঙ্গী করেছি নিজেকে
একাকীত্বে  ভ্রমণের
রয়েছে আলাদা আনন্দ
সরলতায় অসদৃশ, বিপথগামীতায় ঝুঁকিপূর্ণ 

ঠিক এখানেই ছিল সমূদ্র

ঠিক এখানেই ছিল সমূদ্র,
বিক্ষুদ্ধ, অস্থির,
মাথা তার পাহাড়ের দিকে,
গর্জনরত, ভাঙ্গনের শব্দ তুলে
বড়াই করে যাচ্ছিল অমিত শক্তি ক্ষমতার;
সপ্রতিভ, নরোম চাঁদ
আকাশে
বন্ধু তার,
সমান তালে চলে তারা,
ব্যাকুল আকাঙ্ক্ষা সাগরের
বাঁধবে চাঁদকে
বাহু পাশে
কিছু চিহ্নই কেবল থেকে যায়
বাকিরা বিলিন হয়;
দলা পাকানো বিবর্ণ পাথর
লুকিয়ে রাখে রোদে পুড়া মুখ
ঘোলা জল, শূন্য সৈকতের সঙ্গে মিলায় হিসাব,
কিন্তু বন্ধুটি তার এখনো অনুগত;
বিবর্ণ জমিনে
খোদাই করে রাখে স্মৃতির রেখা

আমার অপরাধ: একটি প্রতিশ্রুতি

আমার বাচ্চা, তোমাকে একটি গল্প বলছি শোন: হাজার বার
গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি তোমাকে - উড়তে না পারা পাখির ছানা আমার