রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১

গাজী সাইফুল ইসলামের ছোটগল্প

শিয়াল বাড়ির গফুর মামা এবং একজন বাওলিয়া


জায়াগাটার নাম হরিয়াগাইওখানে আমাদের জেঠা মানে বড় চাচার শ্বশুর বাড়িচাচার শ্বশুরবাড়ি এক অর্থে আমাদেরও মামার বাড়িগ্রামের একান্নবর্তী পরিবারগুলোর কাছে এমন আত্মীয়ের গুরুত্ব কম নয়আমাদের ওই মামারা অনেক ধনী, বাড়িটাও তাদের বেশ বড়কিন্তু আশেপাশের গ্রামের লোকেরা তাদের বলত শিয়াল বাড়ির মানুষ
চিপচিপে লম্বা গড়নের দেখতে সুন্দর আমাদের বড় চাচা ছিলেন একজন বড় মাপের মানুষতিনি মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন: আরে এইডা কই যাইতাম - শিয়াল বাড়ি কী মানুষ যায়? বিশেষ করে বড় চাচীকে রাগানোর জন্য বলতেনবড় চাচী তখন বলতেন: যাইন না যে, আপনেরে কেউ যাইতে কইছে? চেহারার দিক থেকে বড় চাচী ছিলেন জেঠার সম্পূর্ণ উল্টোগায়ের রঙটা কালো আর উচ্চতায় চাচার তুলনায় বেশ খাটোবড় চাচীর যে ব্যাপারটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত, তাহলো, তাঁর অকৃত্তিম সরলতা  আমি তাঁকে বড় আম্মা বলে ডাকতামতিনিও আমাকে আম্মার মতোই আদর করতেন, ভালোবাসতেনআর ডাকতেন আবু বলেআবু শব্দের একটা অর্থ পোলাকিন্তু বড় আম্মা কখনোই আমাকে তাঁর বাপের বাড়ি নিয়ে যেতেন নানানান ছলে এড়িয়ে তাঁর নিজের সন্তানদের নিয়ে চলে যেতেনফলে একেবারে অল্প বয়সে শিয়াল বাড়ির শিয়ালদের সম্পর্কে জানার সুযোগ আমার হয় নিলোকেরা মানুষকে কেন শিয়াল বলবে? এ প্রশ্নটা প্রায়ই আমার মাথায় ঘোরপাক খেত? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম নাএকদিন অবশ্য জেঠাকে ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা জেঠা, আপনার শ্বশুরবাড়ির নাম শিয়াল বাড়ি কেন?
 বড় আম্মাও কাছে ছিলেনজেঠা বড় আম্মার দিকে তাকিয়ে খুব হেসেছিলেনশেষে বলেছিলেন, তাদের বাড়ির জঙ্গলে অনেক শিয়াল থাকে ত এইজন্য তখনকারদিনে গ্রামে শিয়ালের উৎপাত এত বেশি ছিল যে, জেঠার কথাই বিশ্বাস করতে হয়েছিল  কিন্তু জেঠার উত্তর শুনে বড় আম্মা যখন মুখ টিপে হাসছিলেন - আমার সন্দেহ হয়েছিল তাঁর উত্তরের সত্যতা নিয়ে
শিয়াল বাড়ির যে কজন মানুষকে আমার বেশ ভালো লাগত তাদের মধ্যে নূরু মাস্টার আর গফুর মামার নাম এখন বেশি মনে পড়ছেসম্পর্কে নূরু মাস্টারও মামাতিনি শুদ্ধভাষায় কথা বলতেনকিন্তু কণ্ঠটা কর্কশ হওয়ায় তাঁর শুদ্ধ কথাগুলো শুকনো বাঁশে বাড়ি দিলে যেমন ঠাস ঠাস করে এমনই শুনাতআর গফুর মামা কথা বলতেন মিষ্টি করেধীরে সুস্থ্যেআমাদের বাড়ি গেলে আমি তাঁর সঙ্গে খুব মিশতামআম্মা তাকে কিছু না কিছু খেতে দিতেনকিছু না থাকলে পান-সুপারি তো অবশ্যই দিতেনআর অনেকক্ষণ ধরে গুটিশুটি মেরে পাশে বসে সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপ করতেনগত ত্রিশ বছর ধরে ওই গফুর মামার প্রতি আমার দুর্বলতার কারণ খুঁজে যা পেয়েছি তাহলো, তাঁর চাহনিতিনি আমার প্রতি আদর ভরা দৃষ্টিতে তাকাতেননানান বিষয়ে কৌতূক মেশানো কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করতেন? দুর্বলতার কারণ ওগুলোইএ ছাড়া আর কী হতে পারে-তিনি তো কখনো আমাকে একটা চকলেটও কিনে দেন নি
 তো ওই শিয়াল বাড়িতে আমি একদিন ঠিকই গিয়ে হাজির হলামসত্য বলতে যাওয়ার একটা  সুযোগ হয়ে গিয়েছিলহ্যাঁ, অনেক পরের ঘটনা ওটাখুব সম্ভব অষ্ঠম শ্রেণীতে তখন আমি পড়ি

(দুই)
আমাদের একটা গরু হারিয়ে গিয়েছিলআসলে হারিয়ে গিয়েছিল নাকি চোরে নিয়ে গিয়েছিল ওটা কারো জানা ছিল নাআমাদের এলাকায় সে সময় গরু চুরির খুব হিরিক পড়েছিলএমন রাত ছিল না যে আশেপাশের গ্রামের বাড়ি থেকে একদুটো গরু চুরি হতো নাকৃষকদের মধ্যে তখন কী আতঙ্কপালা করে যুবকরা বাড়ি পাহারা দিতে লাগলকিন্তু চোরের উৎপাত বন্ধ হচ্ছিল নাগ্রামের একদিকে পাহারা অন্যদিকে চুরি হচ্ছেমাত্র কিছুদিন আগে আমাদের মুনশি চাচার একটা নাডা গাভী চুরি হলোঅনেক খোঁজাখুঁজির পর সংবাদ পাওয়া গেল বাড়ি থেকে দশ-এগারো মাইল দূরে আরেক গ্রামে গাভীটা আছেকিন্তু আনতে হবে অর্ধেক মূল্যে কিনেকে জানি সংবাদটা দিয়ে গেলেআসলে চারদিকে লোক লাগানো হয়েছিল, যেভাবেই হোক গাভীটা ফিরিয়ে আনতে হবেগাভীটা চাচীর খুব প্রিয়বিকেলে চাচীর হাতে ভাতের মাড় মেশানো কুঁড়া না খেয়ে গাভীটা গোয়ালে ফিরত নাঅনেকে বলত চাচীর কোনো সন্তান ছিল না বলে পশুপাখির প্রতি তাঁর বাড়তি একটা টান ছিল
প্রথমে দুজ লোক গেল চোরদের গ্রামেগাভীটা মুনশি চাচার কি-না দেখার জন্যগিয়ে শুনল ঠিক আছেকিন্তু গাভীটা রাখা হয়েছে মাটির নিচের একটা ঘরেচোখ বেঁধে তাদের ওখানে নিয়ে গেলতারা দেখল সেখানে আরও কটা গরু বাঁধাএখন যেভাবে সন্ত্রাসীরা মানুষ জিম্মি করে টাকা দাবী করে, টাকা না পেলে মানুষকে মেরে ফেলে তখন সেভাবে গরু নিয়ে টাকা দাবী করতটাকা না পেলে গরুটা জবাই করে খেয়ে ফেলতফলে গরুর মালিক নিজের জিনিসের মায়ায় কষ্ট করে হলেও টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতদ্বিতীয়বার গেল তিনজন সাহসী লোকবারোশ টাকা নিয়েচোরেরা আরও বেশি দাবী করেছিল কিন্তু এলাকার চেয়ারম্যানের চাপে বারোশ্থতেই দিতে রাজি হলোসাহসী লোকেরা এজন্য গেল যে, যদি গাভীটা শেষ পর্যন্ত দিতে না চায়, যদি আরও বেশি টাকার জন্য দর কষাকষি করেসন্ধ্যের পরে গরু নিয়ে ফিরলকিন্তু আটদশ দিনের ব্যবধানে গরুটা শুকিয়ে তক্তা হয়ে গিয়েছেআরেকদিন পাশের গ্রামে ঘটল আরও একটা নির্মম ঘটনাএক কৃষক পাহারা শেষ করে রাতের শেষ প্রহরে ঘরে ফিরেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেপ্রতিদিনের মতো গোয়াল ঘরে গিয়ে নিজের গরুগুলো ঠিক আছে কিনা দেখে নিঅথচ প্রতিদিন শুয়ার আগে সে তা করতগোয়ালে তারও দিনপরা একটা পোয়াতি গাভীসকালের দিকে উঠে দেখল গোয়ালে গাভীটা নেইসঙ্গে সঙ্গে কান্নার রুল পড়ল তার বাড়িতেআর তখন মাঠের দিক থেকে এক লোক ছুটে এসে সংবাদ দিল, ওইদিকের মাঠে একটা চামড়া ছিলা গাভী পড়ে কাতরাচ্ছেজীবিত গরুর চামড়া তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরাএ ঘটনাটা এলাকায় দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলকৃষককরাও হয়ে পড়েছিল দারুণ আতঙ্কিত
আমি গিয়েছিলাম খুব ভোরেহরিয়াগাই থেকেও দূরেডেংগাই বিলের পাড়ের একটা গ্রামে সত্যি কোনো গরু ধরা পড়েছে কি-না দেখার জন্যহ্যাঁ, প্রশ্ন উঠতে পারে ওতটুকুন বয়সে একটা ছেলে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে যেতে পারে কীভাবে? আসলে আমার ওপর দায়িত্ব ছিল শুধু গাভীটা আমাদের কিনা দেখে সনাক্ত করাকিন্তু কোনো হদিস করতে না পেরে ফেরার পথে উঠলাম শিয়াল বাড়িপ্রচণ্ড খিদে পেয়ে গিয়েছিল
সকাল নয়টা কী দশটা বাজেক্ষুধা-তৃষ্ণায় আমার পেট-পিঠ লেগে গিয়েছিলশরীর এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, আমি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছিলাম নাআম্মা বলেছিলেন, অনেকটা পথ, যদি খিদে পায় তর গফুর মামুর বাড়িতে যাইছ এ জন্যই আমি সেদিন ও বাড়িতে হাজির হয়েছিলামএবং খোঁজাখুঁজি করে গফুর মামার ঘরটিও বের করেছিলামফালি করা বাঁশের ধুনা দিয়ে বেড়া দেওয়া টিনের বড় ঘরগ্রামে তখন কদাচ টিনের ঘর চোখে পড়ততিনি সকালের খাবার খেতে সবে বাঁশের পাটি পেতে বসছেনআমি দুয়ারে দাঁড়িয়ে ডাকলাম, গফুর মামা!
কেলা - ইসলাম? আইও-আইও 
আমি বারান্দায় উঠে দাঁড়ালামমনে মনে বললাম, উপযুক্ত সময়েই এসেছি
মামা পাটিতে বসতে বসতে মামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এ্যাই হুনছ? এই ছেরাডারেও চাইডা খাইতে দেও
সত্যি ক্ষুধা আমার সহ্য হচ্ছিল নামামার বলার সঙ্গে সঙ্গে আমিও বসতে উদ্ধত হলামআর তখনই মামী চাপা স্বরে গর্জন করে উঠলেন, আব্দার হুনলে গাও জ্বইলা যায়খাওয়ানির লাগি উনি আর মানুষ খুঁইজা পাইলেন না
মামা মামীর ধমক উপেক্ষা করে আমার দিকে তাকালেনবললেন, বস ভাইগ্না কিন্তু মামী এবার গলা আরেটু চড়িযে বললেন, আপনে চুপ কইরা খাইয়া উডেন, পরে দেখা যাইবনে
আমি সব বুঝে খাওয়ার আশা ছেড়ে  পিছু হাঁটলামবারান্দার দিকে পা দিয়েছি, পেছনে মামার আক্ষেপ শোনা গেলআহারে সকাল বেলায় ছেড়াডা না খাইয়া চইলা যাইতাছেগফুর মামা ছাড়া ও ঘরের আর কেউ আমাকে তেমন চিনতো নাতবু আমার খুব লজ্জা করছিলকোনো রকমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে চাইছিলামউঠোন ছেড়ে ধেউরির কাছে পৌঁছেছি অমনি সামনে পড়লেন জহুর মামা: আরে ইসলাম যে, যাইতাছগা ক্যায়া?
মামা মানে, মানে!...
আর মানে মানে করতে অইব নাআমার লগে আইও, তোমার মুখটা খুব শুকনা লাগতাছেমনে অয় খুব খিদা লাগছে
জহুর মামা এ বাড়ির জামাইতাঁর স্ত্রী বড় আম্মার চাচাত বোনখুবই গরীব মানুষজীবনে আমি কোনোদিন তাঁকে ভালো একটা জামা পরতে দেখি নিশীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব ঋতুতেই পা দুটো খালিবড় শাদাসিধে মানুষসব সময় দেখতাম পরনে রঙচটা একটা লুঙ্গি আর কাঁধে একটা গামছাএছাড়া আর কোনো পোশাক তাঁর ছিল মনে হয় নাকিন্তু তবু তাঁকে কখনো আমি মন খারাপ করে থাকতে দেখি নিমানুষের বাড়ি কাজ করতেন, স্ত্রীও কাজ করত এবাড়ি ওবাড়িছেলে তোরাফ আলী আমার সম বয়সীআমাদের বাড়ি বেড়াতে এলে তার সঙ্গে আমি ও আব্দুল লতিফ মার্বেল খেলতামমার্বেল খেলে তোরাফের সঙ্গে কেউ পারত নাখেলা শুরুর অল্পক্ষণের মধ্যে সে আমাদের সবাইকে হারিয়ে দিতজিতে নেওয়া মার্বেলগুলো আবার আমাদের কাছেই বিক্রি করতএটা ছিল তার আয়ের একটা উৎসআমি তখনও জানতাম না জহুর মামা তাঁর পরিবার নিয়ে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে বাওলিয়া (আশ্রিত) থাকেন
কিছু না বলে আমি জহুর মামার পেছনে পেছনে হাঁটছিতিনি আমাকে তাদের ঘরের দুয়ারে নিয়ে গেলেনএক চিলতে বেড়ার ঘরওপরে ডেংগার ছাওনিবৃষ্টির পানিতে চালে ইতোমধ্যেই পচন ধরেছেঘরের ভেতর তখন তোরাফ আলী ও তার মাতারাও সকালের খাবার খেতে বসেছে মাত্র, শুরু করে নিআমাকে দেখে তোরাফ লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলো, আরে ইসলাম! তুমি ক্যামনে আইলা?
যেমনেই আইওক-ভালা অইছেল ইসলামরে লইয়া খাইয়া লইপরে সব কথা হুনা যাইব তোরাফ আলীকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললেন তার মা
জহুর মামা বললেন, ইসলাম হাত-মুখ ধোওআমরা বাবা গরীব মানুষ, তোমারে কী দিয়া খাওয়াইয়াম
আমি খেতে বসেই এক গ্লাস পানি চাইলামজহুর মামা বললেন, আরে ব্যাডা আগে ভাত খাও পরে পানি খাইবানে
খালা রান্না করেছেন চাফিলা মাছ দিয়ে বেগুনএকটাই তরকারীরাক্ষুসে ক্ষুধা পেটেঅমৃত সমান লাগছিল ওই তরকারীকথায় বলে, গরীব মানুষেরা ভাত বেশি খায়হ্যাঁ, প্রচণ্ড খাটুনির পর খিদে পেলে ভাত তো বেশি খেতেই হয়এ কথার মর্ম আমি সেদিন খেতে বসে উপলব্ধি করেছিলামমাত্র চারজনে এক ডেকসি ভাত প্রায় শেষ করে ফেললামআর বুঝতে পেরেছিলাম, গরীবরা রাঁধেও ডেকসি ভরেঘরে থাকলে কৃপণতা করে নাআমার স্পষ্ট মনে আছে, ভাত খেয়ে উঠলে জহুর মামার পেটটা বড় গোল মিষ্টি কুমরার মতো লাগত
 জহুর মামা খাওয়ার শেষ পর্যায়েও বলছিলেন: ইসলামরে আরও কয়ডা ভাত দেওহে কি আর কোনোদিন আমরার বাড়ি খাইতে আইব নাকি? ক্যামনে যে ভাগে-বরাতে মিইলা গেছে তোরাফ আলীও তার পাতের বড় মাছটা আমার পাতে তুলে দিতে দিতে বলছিল, আরে খাও খাও আর একটা মাত্র তরকারী দিয়ে আমাকে খাওয়াতে গিয়ে খালারও খারাপ লাগছিলতিনি বারবার বলছিলেন: ছেড়াডা যদি আর একটু আগে আইত? আর বলছিলেন, না জানি তরাকারীটা ক্যামন অইছে, ইসলামের মুখে ভালা লাগছে কি-না আমি আর কী বলব, শুধু বলেছিলাম: খালা তরকারী যেমনই অওক ডেকসির ভাত তো শেষ কইরা ফালাইছি তারা সবাই তখন হেসে ফেলেছিলেনতাদের এমন আন্তরিকতা দেখে আর কথা শুনে আমারও খুব লজ্জা লাগছিল এই ভেবে যে, জহুর মামা, তোরাফ আলী আর খালা কতদিন আমাদের বাড়ি বেড়াতে গেছেনআমরা কোনোদিন তাদের এমন খাতির-যত্ন করি নিখাতির করেছি গফুর মামা কিংবা নূরু মাস্টারকে, ঘরে পৌঁছা মাত্র আম্মা তাঁদে পান কেটে দিতেনকখনো রাতে বানিয়ে রাখা কলা বা তালের পিঠা খেতে দিতেনগফুর মামার মতো এত সুন্দর করে জহুর মামাকে কোনোদিন তো আমি মামাও ডাকি নিএকজন বাওলিয়া, যার নিজের মাথা গুঁজার একটা ঠাঁই নেই তাঁর মন এত বড় হয় কীভাবে? তিনি তো তাঁর স্ত্রীকেও ভয় পান নাআমাকে খেতে দিতে বলায় গফুর মামাকে তাঁর স্ত্রী যে ধমক দিয়েছিলেন - আমার সারাজীবন তা মনে থাকবেমামীর ভয়ে মামা কেমন শিয়াল বনে গিয়েছিলেনঅথচ খালাকে নিয়ে জহুর মামার মধ্যে কোনো টানাপোড়েন দেখি নিতাহলে কি এ জন্যই গফুর মামাদের বাড়িটা শিয়াল বাড়ি নামে পরিচিতি?

সাপ্তাহিক একাত্তর
২১ জুন ০৬

কোন মন্তব্য নেই :