শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯

মূর্তিকারিগর-জাহিদ নেওয়াজ খানের উপন্যাস

বুক রিভিউ

মূর্তিকারিগর: জাহিদ নেওয়াজ খান

প্রকাশক: আবিষ্কার, প্রকাশকাল ২০১৮ (দ্বিতীয় সংস্করণ)
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ, পৃষ্ঠা সংখ্যা-৮৫।
জাহিদ নেওয়াজ খান তরুণ লেখক। এর আগে তার আরো কটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আগের বইগুলো পড়ার সুযোগ হয়নি।  বাংলাদেশে প্রতি বছর বই মেলা উপলক্ষে কত বই বের হয়। বেশিরভাগ বইয়ের খবরই পাঠকের অগোচরে থেকে যায়। জাহিদ নেওয়াজ খানের মূতিকারিগর  আমার হাতে এসেছে প্রকাশের দেড় বছর পর।


যাহোক, বইয়ের মূল গল্প, প্রধান চরিত্রের বিচারে বইটির নামকরণ যথার্থ। কারণ এতে একজন মূতি কারিগরের কথাই বলা হয়েছে। তার তরুণ বয়সের স্বপ্ন, সংগ্রাম, একেবারে পেছন থেকে উঠে আসার গল্প এতে বিবৃত হয়েছে।
আমাদের এখানে প্রতি বছর প্রচুর উপন্যাস রচিত হয়। বেশির ভাগ উপন্যাসেই ভালো গল্প থাকে। কিন্তু কিছু কারণে বিশেষ করে, গল্পে উন্মেষ, বিকাশ আর পরিণতি সমানভাবে বিস্তৃত হয় না। তাড়াহুড়ো, দুর্বল বর্ণনা, ডিটিলসের অভাব আর করুণ উপসংহার বইগুলোকে উপন্যাস হয়ে উঠতে দেয় না।
জাহিদ নেওয়াজ খানের ‘মূতিকারিগর’ও একই ভাগ্য বরণ করেছে। ১৭ পৃষ্ঠা থেকে ৬৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখক যেভাবে গল্প বলেছেন, যে নির্মোহতায় লিখেছেন বাকি পৃষ্ঠাগুলোতে একই রকম মনোনিবেশ অব্যাহত রাখতে পারলে, নাতিদীর্ঘ হয়েও এটি একটি ভালো উপন্যাসে পরিণত হতে পারত।
তার মূল গল্প একজন মুসলমান যুবক হিন্দুদের পুজোর মূর্তি তৈরি করে। ময়মনসিংহে স্বাধীনতার পূর্বে রশিদ নামে এ রকম একজন শিল্পী ছিলেন। ৯০ % মুসলমানের মুসলমানের দেশে একজন মুসলিম শিল্পীর পক্ষে এমন কাজ চালিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ নিঃসন্দেহে। কিন্তু উপন্যাসের চরিত্র বাদলের ছোট বেলার স্বপ্ন সে বড় ভাস্কর্য হবে। কিন্তু অভাব, সাংসারিক অস্বচ্ছলতা তাকে সে পথে এগোতে দেয় না। কিন্তু মূলত অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনেই একদিন সে মূর্তি তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে দেয়। এরপর সে হয়ে যায়, শহরের, আশপাশের এলাকার একমাত্র নির্ভরযোগ্য মূর্তি কারিগর। যদিও প্রথমদিকে হিন্দুরা তার তৈরি মূর্তিতে আপত্তি করেছিল। আর ১৭ পৃষ্ঠা থেকে ৬৫ পৃষ্ঠা এ গল্পই টানটান এগিয়ে গেছে। ৬৫ পৃষ্ঠার পর, স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্পে ঢুকে পড়ে উপন্যাস। আর ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে উপসংহারের দিকে এগিয়ে যায় দায়সারা প্রচ্ছদের এ উপন্যাসটি।
পুরো উপন্যাস পাঠে, লেখক জাহিদ নেওয়াজ খান সম্পর্কে যে সকল ধারণা হয়েছে, তা হলো তার ভাষার দুর্বলতা। সর্বত্র সময়ের অভাব। কিন্তু নির্মাণ শৈলীটা ভালো। ইচ্ছে করলে, অনেক দূর যাওয়া সম্ভব। তার মধ্যে মরমী ও ভাববাদী চেতনার সঙ্গে যুক্ত আছে মানবতাবাদী চেতনা। মানুষকে ভালোবাসার দিকে নিয়ে যাওয়ার অসম্ভব ঐকান্তিক ইচ্ছা। এসব গুণের সমাবেশ একজন লেখকের জন্য আশীর্বাদ। সর্বোপরি, তার মধ্যে দেখা মেলে, ময়মনসিংহের ভাটি অঞ্চলের বাউলেপণা, যা আরো পাঠে বিকশিত হওয়া সম্ভব।
আবিষ্কারের এ বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
জাহিদ নেওয়াজ খান


গাজী সাইফুল ইসলাম
লেখক, অনুবাদক
গাজী সাইফুল ইসলাম

কোন মন্তব্য নেই :