নার্গিস এলো
সকালে বালতির টুংটাং শব্দ শুনে
আমি বুঝে নিই
রাতে কিছু একটা হয়েছে পাশের ঘরে।
হয়তো কোনো দরকারি কথা ছিল না
ছিল শুধু বৈশাখি ঝড়ো বাতাস
ছিল শুধু ফিসফিসানি, কানাকানি
হয়তো জন্ম নিতে যাচ্ছে আরেকটি মানব শিশু।
এমন রাতে বুনো ইচ্ছেরা চায় আরও বুনো হতে
চুমো খেতে অন্ধকারে
বিগত কদিনের রোদে পোড়া রাত
হঠাৎই ঠাণ্ডা হয়েছিল উপকূলীয় ঝড়
নার্গিসের তাণ্ডবে।
আমি কী আর ভাবব? শুধু মনে হলো
নার্গিস এলো, আমার বয়স যখন চল্লিশের ওপরে
আসেনি আঠারো কিংবা আঠাসে।
সাপ্তাহিক সাহিত্যের কাগজ
০০/০০/০০
তোমার নদীর তীরে
তোমার নদীর তীরে তুমি ঘাস হও
কাশফুল হও
শেওড়া কদম ঝাউ জামরুল হও
পাখি আর পাখিদের গান হয়ে
মুখরিত করো তুমিই বনতল।
তোমার নদীর তীরে তুমি হও রাখালিয়া
দিনমান খেলো
গরু চড়ানোর খেল আর গাও বাউলিয়া
গাছতলে বসে বাজাও বিষের বাঁশি
কী যে প্রাণকাড়া সুর তুমি সর্বনাশি।
তোমার নদীর জলে তুমি মাছ হয়ে
কাটো যে সাঁতার
কত কি নামের বাহার তোমার
ইলিশ চিতল বাইন পাঙ্গাস
জলের কুমিরও তুমিই হও স্নিদ্ধ শতদল।
দুজাহানে তুমি বাষ্প হও, মেঘ হও
বৃষ্টি হয়ে ঝরো
ধন্য হয় তপ্ত মাটি তোমাকে পেয়ে
আমার এ জীবনেও তুমিই সব
প্রেম, বিশ্বাস, নিশ্বাস ও ভালোবাসা।
তোমরা কেউ বন্ধু নও আমার
তোমাদের আমি চিনি জানি বুঝি
কেউই আমার বন্ধু নও-হতে পারো না।
আকাশকে দেখো যতই ব্যাকুল হোক
মাটির তৃষ্ণায়-প্রকৃতই বন্ধু তারা নয়।
সাগরকে দেখো নীলাভ জোছ্না
কেমন বুকের গভীরে বাঁধে
ঝলমলে ঢেউ যতই পাগল হোক
মরিচিকা ছাড়া তারা যে কিছু না
আমরা তা জানি।
এমন দুর্বল ভালোবাসা আমাদের
হাত রাখি হাতে
কিন্তু কেউ কারে প্রকৃতই চিনি না
চোখ রাখি চোখে
কিন্তু কেউ কারো মনের খবর জানি না।
কাজেই তোমরা কেউ বন্ধু নও আমার
যত বলো, ডাকো চোখে নিয়ে জল
আমি দেখি শুধু ছল, অন্ধকার।
কখনো কখনো তোমাদের সঙ্গে একমত হই আমি
কখনো কখনো তোমাদের সঙ্গে একমত হই আমি
যখন তোমরা বলো আকাশটা নীল
হ্যাঁ, নীলইতো। কিন্তু নীলটাই শেষ কথা নয়
আকাশের আছে আরও অনেক রঙ, রূপ
সকালে কোমল,
দুপুরে কঠোর,
বিকেলে নিস্তেজ
রাতে মোহনীয়।
এসব আবার গ্রীষ্ম-বর্ষায়, শরতে-হেমন্তে ভিন্নতর হয়।
সূর্য-চাঁদ-তারা আকাশের অলঙ্কার
এসব ছাড়া বড় নিরাভরণ সে গাঁয়ের বধুর মতো।
কখনো কখনো তোমাদের সঙ্গে একমত হই আমি
যখন তোমরা করো তুলনা নদী সঙ্গে নারীর,
গাড়ির সঙ্গে বাড়ির, ঘুমের সঙ্গে মৃত্যুর
স্বপ্নের সঙ্গে নীল আসমানের-
আমি ওই নীল আসমানটাকেই ধরে নিই
আমার সুরভির নদী, তার উতপত্তি যে কৈলাস পর্বতে নয়
আমার বুকে। আমার বুকেও আছে একটি অরণ্য
মসৃণ পাথরের ঝর্ণাধারা,
তোমরা ইচ্ছে করলে সেখানে ফুটাতে পারো ফুল।
তোমরা যখন প্রসাদের জীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়বে
মখমল যখন চুলখানির সৃষ্টি করবে দুউরুর ফাঁকে
চলো এসে, সুরভি নদীর তীরে
এখানকার ঘাসের বিছনায় শুয়ে থাকবে রাতভর
আর জপবে প্রিয়জনের নাম,
যে নেই তোমার সঙ্গে, প্রেমহীন জীবনে।
কখনো কখনো আমি তোমাদের সঙ্গে একমত হই
যখন তোমরা বলো মা-বাবা আর সন্তানের
ভালোবাসার কথা
যখন বলো স্ত্রীর কপোলে চুম্বন এঁকে দেয়ার কথা
কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের দিকে কটুক্তি ছুঁড়ে দেয়া
আমার কাজ নয়, আমায় ক্ষমা করো,
মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে অন্তরে প্রবেশ করে-
কারও সর্বনাশও করাও আমার কাজ নয়।
স্বার্থ হাসিলের জন্য মুখে মধু ঝরাতে পারব না আমি...
মেরে ফেললেও না।
আত্মঘাতি কেন ফিলিস্তিনি যুবক
দেকার্দে কী বলেছিলেন-
তা নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাই না।
হেগেল বস্তুবাদী না ভাববাদী যেমন ভাবি না
মার্কসের দ্বান্দ্বিকবস্তুবাদও আগের মতো টানে না।
বরং আলোড়িত হই ফিলিস্তিনি সেইসব যুবকের কথা ভেবে
যারা আত্মঘাতী হচ্ছেÑস্বদেশ ও স্বাধীনতার জন্য,
আন্ডারওয়ারের সঙ্গে বোমা বেধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে
চলন্ত গাড়ির নিচে।
আলোড়িত হই ইন্টারনেটে কিশোর ফিলিস্তিনি কবির কবিতা পড়ে
যখন সে লিখে: আমরা কি মানুষ নই?
সার্বভৌম একটি আশ্রয়ের কি প্রয়োজন নেই আমাদের?
গান্ধীর অহিংসার বাণী কিংবা রক্তপাতহীন অভ্যূত্থান
আমাদের জন্য নয়,
কারণ প্রতিদিনই রঞ্জিত হচ্ছে আমাদের মাটি
আমাদেরই শিশুর রক্তে।
রাজপথের শান্তপূর্ণ মিছিল-
ফিলিস্তিনিদের কোনোদিন পৌঁছে না দেবে না গন্তব্যে
ওই মানচিত্র ক্রমশই হয়ে উঠছে মৃত্যু ফাঁদ
অথবা চাঁদ আমাদের দুঃস্বপ্নের আকাশে।
মিনায় শয়তানের উদ্দেশ্যে দিনরাত পাথর ছুঁড়েও
যেমন শয়তান থেকে মুক্ত হয় হয় না মানুষ
তেমনই গত ৬৭ বছর ইসরালি সেনাদের ইটপাটকেল ছুঁড়ে
ইসরাইলের আগ্রাসন মুক্ত হয়নি গাজা স্ট্রিপ কিংবা শশ্চিম তীর।
গ্যালিলি, বিরওয়ার সব ঘরবাড়ি ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েও
থামেনি ইসরালি বুল ডুজার
কিংবা আমেরিকা-ব্রিটেনের ষড়যন্ত্র।
কাজেই ফিলিস্তিনিদের জন্য আত্মঘাতী হওয়ার অর্থই হলো
লক্ষ্যভ্রষ্টহীন হওয়া
নিজের মৃত্যু দিয়ে শত্রুর মৃত্যু ছোঁয়া।
পোস্টিং তারিখ:
কাঁচিঝুলি
৩০/০৩/১১