বিশ্ব বাবা দিবসের লেখা
আমার বাবা
গাজী সাইফুল ইসলাম
আমার বাবার নাম শুনে অনেকেই আমাকে ঠাট্রা করত। বিশেষ করে ছোট বেলায়। পরে আনন্দ মোহন কলেজে পড়ার সময় যখন টিউশনি করতাম, তখনো। একটি ছাত্রী ছিল বেশ দুষ্টু। তার মাকে আমি আপা বলে ডাকতাম। সে আমাকে ডাকত মামা। ফলে আমার বাবাকে ঠাট্রা করার একটা সুযোগ তার ছিল। এখন আমার সন্তান, বিশেষ করে মেয়েটা, ওর নাম তোহ্ফা, রেগে গেলে ওইরকম কথা বলে বসে। বলে, তুমি তো আক্কেল আলীর পুত বেক্কেল আলী, তুমি বুঝবা না। এখন তাহলে তোমরাও নিশ্চয়ই জেনে গেছে আমার বাবার নামটা কী। গ্রামের লোকেরা এই নামটাকেও আরও ছেঁটে ডাকে আক্কেল। হ্যাঁ, আমার বাবার নাম আক্কেল আলী। তিনি একজন নিরক্ষর মানুষ। সত্যিকারের নিক্ষর, নিজের নামটাও লিখতে পারেন না।
কিন্তু তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। এতসব ঠাট্রা মশকরা সত্ত্বেও আমার কোনোদিন মনে হয়নি-দাদাদাদী বাবার নামটা এ রকম রেখেছিল কেন? বরং বরাবরই আমার মনে হয়েছে, আমার বাবার জন্য এ নামটাই মানানসই। পৃথিবীর আর যে কোনো নামে তাকে মানত না। যেমন জৈগুন্নেসা ছাড়া আর অন্য কোনো নামে মানত না আমার মাকে।
আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত গ্রামে। গ্রামের নাম পুরান্নগর। বাবা ওই গ্রামেরই একজন স্বচ্ছল কৃষক। সারাজীবন তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। আমার মায়ের উৎসাহ আর প্রেরণায় তিনি টানা পরিশ্রম করেছেন কৃষি উৎপাদনে। সন্তানদেরও কমবেশি লেখাপড়া শিখিয়েছেন। অলস লোকদের তিনি একদম পছন্দ করেন না। ঘুম থেকে উঠেন সেই ভোর বেলা। গোয়াল থেকে গরু বের করা, দুধ দোহানো, ছেলেদের ডেকে ঘুম থেকে ওঠানো এসব দিয়েই দিনের শুরু হয় তাঁর। এরপর কাজের লোক সঙ্গে নিয়ে চলে যান ক্ষেতে। তাঁর মতে, সঙ্গে না থাকলে কাজের লোকেরা সঠিকভাবে কাজ করে না।
বাবা আমাকে ভালোবাসেন কিনা জানি না। ভাইবোন মিলে ৯ জন আমরা। সবার বেলায়ই বোধহয় এ কথা খাটে। কাউকে বাবা-মা বলে কোনাদিন সম্বোধন করেছেন আমি শুনিনি। আমি ধরে নিয়েছি তিনি এ প্রকৃতিরই মানুষ। ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন না। বা তার কোনো প্রয়োজনও বোধ করেন না।
আমার প্রথম বই, বাবা-মার নামে উৎসর্গ করেছিলাম। মা এখন নেই। বাবা আছেন। এবার প্রকশিতব্য আরেকটি বই শুধু বাবার নামে উৎসর্গ করছি। উৎসর্গস্থানে আমি লিখেছি,
আমার বাবা
আক্কেল আলী
লেখাপড়া না জানা খুব সাধারণ একজন বাবা
আমি তাঁকে খুব ভালোবাসী
কিন্তু যতটা ভালোবাসি ততটা প্রকাশ করতে পারি না
আমি যখন আমার সন্তানদের আদর করি
তাঁর কথা খুব মনে পড়ে
আমি জানি
ওই অর্থে বাবা তাঁর জীবনে শুধু একজনের কাছ থেকেই ভালোবাসা পেয়েছেন,
তিনি আমার আম্মা, জয়গুন্নেসা।
আমার সবচেয়ে প্রিয় এ দুজন মানুষকে...Md. Akkel Ali |