শিয়াল বাড়ির গফুর মামা এবং একজন বাওলিয়া
জায়াগাটার নাম হরিয়াগাই। ওখানে আমাদের জেঠা মানে বড় চাচার শ্বশুর বাড়ি। চাচার শ্বশুরবাড়ি এক অর্থে আমাদেরও মামার বাড়ি। গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারগুলোর কাছে এমন আত্মীয়ের গুরুত্ব কম নয়। আমাদের ওই মামারা অনেক ধনী, বাড়িটাও তাদের বেশ বড়। কিন্তু আশেপাশের গ্রামের লোকেরা তাদের বলত শিয়াল বাড়ির মানুষ।
চিপচিপে লম্বা গড়নের দেখতে সুন্দর আমাদের বড় চাচা ছিলেন একজন বড় মাপের মানুষ। তিনি মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন: আরে এইডা কই যাইতাম - শিয়াল বাড়ি কী মানুষ যায়? বিশেষ করে বড় চাচীকে রাগানোর জন্য বলতেন। বড় চাচী তখন বলতেন: যাইন না যে, আপনেরে কেউ যাইতে কইছে? চেহারার দিক থেকে বড় চাচী ছিলেন জেঠার সম্পূর্ণ উল্টো। গায়ের রঙটা কালো আর উচ্চতায় চাচার তুলনায় বেশ খাটো। বড় চাচীর যে ব্যাপারটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত, তাহলো, তাঁর অকৃত্তিম সরলতা। আমি তাঁকে বড় আম্মা বলে ডাকতাম। তিনিও আমাকে আম্মার মতোই আদর করতেন, ভালোবাসতেন। আর ডাকতেন আবু বলে। আবু শব্দের একটা অর্থ পোলা। কিন্তু বড় আম্মা কখনোই আমাকে তাঁর বাপের বাড়ি নিয়ে যেতেন না। নানান ছলে এড়িয়ে তাঁর নিজের সন্তানদের নিয়ে চলে যেতেন। ফলে একেবারে অল্প বয়সে শিয়াল বাড়ির শিয়ালদের সম্পর্কে জানার সুযোগ আমার হয় নি। লোকেরা মানুষকে কেন শিয়াল বলবে? এ প্রশ্নটা প্রায়ই আমার মাথায় ঘোরপাক খেত? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একদিন অবশ্য জেঠাকে ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা জেঠা, আপনার শ্বশুরবাড়ির নাম শিয়াল বাড়ি কেন?
বড় আম্মাও কাছে ছিলেন। জেঠা বড় আম্মার দিকে তাকিয়ে খুব হেসেছিলেন। শেষে বলেছিলেন, তাদের বাড়ির জঙ্গলে অনেক শিয়াল থাকে ত এইজন্য। তখনকারদিনে গ্রামে শিয়ালের উৎপাত এত বেশি ছিল যে, জেঠার কথাই বিশ্বাস করতে হয়েছিল। কিন্তু জেঠার উত্তর শুনে বড় আম্মা যখন মুখ টিপে হাসছিলেন - আমার সন্দেহ হয়েছিল তাঁর উত্তরের সত্যতা নিয়ে।
শিয়াল বাড়ির যে কজন মানুষকে আমার বেশ ভালো লাগত তাদের মধ্যে নূরু মাস্টার আর গফুর মামার নাম এখন বেশি মনে পড়ছে। সম্পর্কে নূরু মাস্টারও মামা। তিনি শুদ্ধভাষায় কথা বলতেন। কিন্তু কণ্ঠটা কর্কশ হওয়ায় তাঁর শুদ্ধ কথাগুলো শুকনো বাঁশে বাড়ি দিলে যেমন ঠাস ঠাস করে এমনই শুনাত। আর গফুর মামা কথা বলতেন মিষ্টি করে। ধীরে সুস্থ্যে। আমাদের বাড়ি গেলে আমি তাঁর সঙ্গে খুব মিশতাম। আম্মা তাকে কিছু না কিছু খেতে দিতেন। কিছু না থাকলে পান-সুপারি তো অবশ্যই দিতেন। আর অনেকক্ষণ ধরে গুটিশুটি মেরে পাশে বসে সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপ করতেন। গত ত্রিশ বছর ধরে ওই গফুর মামার প্রতি আমার দুর্বলতার কারণ খুঁজে যা পেয়েছি তাহলো, তাঁর চাহনি। তিনি আমার প্রতি আদর ভরা দৃষ্টিতে তাকাতেন। নানান বিষয়ে কৌতূক মেশানো কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করতেন? দুর্বলতার কারণ ওগুলোই। এ ছাড়া আর কী হতে পারে-তিনি তো কখনো আমাকে একটা চকলেটও কিনে দেন নি।
তো ওই শিয়াল বাড়িতে আমি একদিন ঠিকই গিয়ে হাজির হলাম। সত্য বলতে যাওয়ার একটা সুযোগ হয়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ, অনেক পরের ঘটনা ওটা। খুব সম্ভব অষ্ঠম শ্রেণীতে তখন আমি পড়ি।
(দুই)
আমাদের একটা গরু হারিয়ে গিয়েছিল। আসলে হারিয়ে গিয়েছিল নাকি চোরে নিয়ে গিয়েছিল ওটা কারো জানা ছিল না। আমাদের এলাকায় সে সময় গরু চুরির খুব হিরিক পড়েছিল। এমন রাত ছিল না যে আশেপাশের গ্রামের বাড়ি থেকে একদুটো গরু চুরি হতো না। কৃষকদের মধ্যে তখন কী আতঙ্ক। পালা করে যুবকরা বাড়ি পাহারা দিতে লাগল। কিন্তু চোরের উৎপাত বন্ধ হচ্ছিল না। গ্রামের একদিকে পাহারা অন্যদিকে চুরি হচ্ছে। মাত্র কিছুদিন আগে আমাদের মুনশি চাচার একটা নাডা গাভী চুরি হলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সংবাদ পাওয়া গেল বাড়ি থেকে দশ-এগারো মাইল দূরে আরেক গ্রামে গাভীটা আছে। কিন্তু আনতে হবে অর্ধেক মূল্যে কিনে। কে জানি সংবাদটা দিয়ে গেলে। আসলে চারদিকে লোক লাগানো হয়েছিল, যেভাবেই হোক গাভীটা ফিরিয়ে আনতে হবে। গাভীটা চাচীর খুব প্রিয়। বিকেলে চাচীর হাতে ভাতের মাড় মেশানো কুঁড়া না খেয়ে গাভীটা গোয়ালে ফিরত না। অনেকে বলত চাচীর কোনো সন্তান ছিল না বলে পশুপাখির প্রতি তাঁর বাড়তি একটা টান ছিল।
প্রথমে দুজ লোক গেল চোরদের গ্রামে। গাভীটা মুনশি চাচার কি-না দেখার জন্য। গিয়ে শুনল ঠিক আছে। কিন্তু গাভীটা রাখা হয়েছে মাটির নিচের একটা ঘরে। চোখ বেঁধে তাদের ওখানে নিয়ে গেল। তারা দেখল সেখানে আরও কটা গরু বাঁধা। এখন যেভাবে সন্ত্রাসীরা মানুষ জিম্মি করে টাকা দাবী করে, টাকা না পেলে মানুষকে মেরে ফেলে তখন সেভাবে গরু নিয়ে টাকা দাবী করত। টাকা না পেলে গরুটা জবাই করে খেয়ে ফেলত। ফলে গরুর মালিক নিজের জিনিসের মায়ায় কষ্ট করে হলেও টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনত। দ্বিতীয়বার গেল তিনজন সাহসী লোক। বারোশ টাকা নিয়ে। চোরেরা আরও বেশি দাবী করেছিল কিন্তু এলাকার চেয়ারম্যানের চাপে বারোশ্থতেই দিতে রাজি হলো। সাহসী লোকেরা এজন্য গেল যে, যদি গাভীটা শেষ পর্যন্ত দিতে না চায়, যদি আরও বেশি টাকার জন্য দর কষাকষি করে। সন্ধ্যের পরে গরু নিয়ে ফিরল। কিন্তু আটদশ দিনের ব্যবধানে গরুটা শুকিয়ে তক্তা হয়ে গিয়েছে। আরেকদিন পাশের গ্রামে ঘটল আরও একটা নির্মম ঘটনা। এক কৃষক পাহারা শেষ করে রাতের শেষ প্রহরে ঘরে ফিরেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রতিদিনের মতো গোয়াল ঘরে গিয়ে নিজের গরুগুলো ঠিক আছে কিনা দেখে নি। অথচ প্রতিদিন শুয়ার আগে সে তা করত। গোয়ালে তারও দিনপরা একটা পোয়াতি গাভী। সকালের দিকে উঠে দেখল গোয়ালে গাভীটা নেই। সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রুল পড়ল তার বাড়িতে। আর তখন মাঠের দিক থেকে এক লোক ছুটে এসে সংবাদ দিল, ওইদিকের মাঠে একটা চামড়া ছিলা গাভী পড়ে কাতরাচ্ছে। জীবিত গরুর চামড়া তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনাটা এলাকায় দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। কৃষককরাও হয়ে পড়েছিল দারুণ আতঙ্কিত।
আমি গিয়েছিলাম খুব ভোরে। হরিয়াগাই থেকেও দূরে। ডেংগাই বিলের পাড়ের একটা গ্রামে সত্যি কোনো গরু ধরা পড়েছে কি-না দেখার জন্য। হ্যাঁ, প্রশ্ন উঠতে পারে ওতটুকুন বয়সে একটা ছেলে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে যেতে পারে কীভাবে? আসলে আমার ওপর দায়িত্ব ছিল শুধু গাভীটা আমাদের কিনা দেখে সনাক্ত করা। কিন্তু কোনো হদিস করতে না পেরে ফেরার পথে উঠলাম শিয়াল বাড়ি। প্রচণ্ড খিদে পেয়ে গিয়েছিল।
সকাল নয়টা কী দশটা বাজে। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় আমার পেট-পিঠ লেগে গিয়েছিল। শরীর এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, আমি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছিলাম না। আম্মা বলেছিলেন, অনেকটা পথ, যদি খিদে পায় তর গফুর মামুর বাড়িতে যাইছ। এ জন্যই আমি সেদিন ও বাড়িতে হাজির হয়েছিলাম। এবং খোঁজাখুঁজি করে গফুর মামার ঘরটিও বের করেছিলাম। ফালি করা বাঁশের ধুনা দিয়ে বেড়া দেওয়া টিনের বড় ঘর। গ্রামে তখন কদাচ টিনের ঘর চোখে পড়ত। তিনি সকালের খাবার খেতে সবে বাঁশের পাটি পেতে বসছেন। আমি দুয়ারে দাঁড়িয়ে ডাকলাম, গফুর মামা!
কেলা - ইসলাম? আইও-আইও।
আমি বারান্দায় উঠে দাঁড়ালাম। মনে মনে বললাম, উপযুক্ত সময়েই এসেছি।
মামা পাটিতে বসতে বসতে মামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এ্যাই হুনছ? এই ছেরাডারেও চাইডা খাইতে দেও।
সত্যি ক্ষুধা আমার সহ্য হচ্ছিল না। মামার বলার সঙ্গে সঙ্গে আমিও বসতে উদ্ধত হলাম। আর তখনই মামী চাপা স্বরে গর্জন করে উঠলেন, আব্দার হুনলে গাও জ্বইলা যায়। খাওয়ানির লাগি উনি আর মানুষ খুঁইজা পাইলেন না।
মামা মামীর ধমক উপেক্ষা করে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, বস ভাইগ্না। কিন্তু মামী এবার গলা আরেটু চড়িযে বললেন, আপনে চুপ কইরা খাইয়া উডেন, পরে দেখা যাইবনে।
আমি সব বুঝে খাওয়ার আশা ছেড়ে পিছু হাঁটলাম। বারান্দার দিকে পা দিয়েছি, পেছনে মামার আক্ষেপ শোনা গেল। আহারে সকাল বেলায় ছেড়াডা না খাইয়া চইলা যাইতাছে। গফুর মামা ছাড়া ও ঘরের আর কেউ আমাকে তেমন চিনতো না। তবু আমার খুব লজ্জা করছিল। কোনো রকমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে চাইছিলাম। উঠোন ছেড়ে ধেউরির কাছে পৌঁছেছি অমনি সামনে পড়লেন জহুর মামা: আরে ইসলাম যে, যাইতাছগা ক্যায়া?
মামা মানে, মানে!...
আর মানে মানে করতে অইব না। আমার লগে আইও, তোমার মুখটা খুব শুকনা লাগতাছে। মনে অয় খুব খিদা লাগছে।
জহুর মামা এ বাড়ির জামাই। তাঁর স্ত্রী বড় আম্মার চাচাত বোন। খুবই গরীব মানুষ। জীবনে আমি কোনোদিন তাঁকে ভালো একটা জামা পরতে দেখি নি। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব ঋতুতেই পা দুটো খালি। বড় শাদাসিধে মানুষ। সব সময় দেখতাম পরনে রঙচটা একটা লুঙ্গি আর কাঁধে একটা গামছা। এছাড়া আর কোনো পোশাক তাঁর ছিল মনে হয় না। কিন্তু তবু তাঁকে কখনো আমি মন খারাপ করে থাকতে দেখি নি। মানুষের বাড়ি কাজ করতেন, স্ত্রীও কাজ করত এবাড়ি ওবাড়ি। ছেলে তোরাফ আলী আমার সম বয়সী। আমাদের বাড়ি বেড়াতে এলে তার সঙ্গে আমি ও আব্দুল লতিফ মার্বেল খেলতাম। মার্বেল খেলে তোরাফের সঙ্গে কেউ পারত না। খেলা শুরুর অল্পক্ষণের মধ্যে সে আমাদের সবাইকে হারিয়ে দিত। জিতে নেওয়া মার্বেলগুলো আবার আমাদের কাছেই বিক্রি করত। এটা ছিল তার আয়ের একটা উৎস। আমি তখনও জানতাম না জহুর মামা তাঁর পরিবার নিয়ে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে বাওলিয়া (আশ্রিত) থাকেন।
কিছু না বলে আমি জহুর মামার পেছনে পেছনে হাঁটছি। তিনি আমাকে তাদের ঘরের দুয়ারে নিয়ে গেলেন। এক চিলতে বেড়ার ঘর। ওপরে ডেংগার ছাওনি। বৃষ্টির পানিতে চালে ইতোমধ্যেই পচন ধরেছে। ঘরের ভেতর তখন তোরাফ আলী ও তার মা। তারাও সকালের খাবার খেতে বসেছে মাত্র, শুরু করে নি। আমাকে দেখে তোরাফ লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলো, আরে ইসলাম! তুমি ক্যামনে আইলা?
যেমনেই আইওক-ভালা অইছে। ল ইসলামরে লইয়া খাইয়া লই। পরে সব কথা হুনা যাইব। তোরাফ আলীকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললেন তার মা।
জহুর মামা বললেন, ইসলাম হাত-মুখ ধোও। আমরা বাবা গরীব মানুষ, তোমারে কী দিয়া খাওয়াইয়াম।
আমি খেতে বসেই এক গ্লাস পানি চাইলাম। জহুর মামা বললেন, আরে ব্যাডা আগে ভাত খাও পরে পানি খাইবানে।
খালা রান্না করেছেন চাফিলা মাছ দিয়ে বেগুন। একটাই তরকারী। রাক্ষুসে ক্ষুধা পেটে। অমৃত সমান লাগছিল ওই তরকারী। কথায় বলে, গরীব মানুষেরা ভাত বেশি খায়। হ্যাঁ, প্রচণ্ড খাটুনির পর খিদে পেলে ভাত তো বেশি খেতেই হয়। এ কথার মর্ম আমি সেদিন খেতে বসে উপলব্ধি করেছিলাম। মাত্র চারজনে এক ডেকসি ভাত প্রায় শেষ করে ফেললাম। আর বুঝতে পেরেছিলাম, গরীবরা রাঁধেও ডেকসি ভরে। ঘরে থাকলে কৃপণতা করে না। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ভাত খেয়ে উঠলে জহুর মামার পেটটা বড় গোল মিষ্টি কুমরার মতো লাগত।
জহুর মামা খাওয়ার শেষ পর্যায়েও বলছিলেন: ইসলামরে আরও কয়ডা ভাত দেও। হে কি আর কোনোদিন আমরার বাড়ি খাইতে আইব নাকি? ক্যামনে যে ভাগে-বরাতে মিইলা গেছে। তোরাফ আলীও তার পাতের বড় মাছটা আমার পাতে তুলে দিতে দিতে বলছিল, আরে খাও খাও। আর একটা মাত্র তরকারী দিয়ে আমাকে খাওয়াতে গিয়ে খালারও খারাপ লাগছিল। তিনি বারবার বলছিলেন: ছেড়াডা যদি আর একটু আগে আইত? আর বলছিলেন, না জানি তরাকারীটা ক্যামন অইছে, ইসলামের মুখে ভালা লাগছে কি-না। আমি আর কী বলব, শুধু বলেছিলাম: খালা তরকারী যেমনই অওক ডেকসির ভাত তো শেষ কইরা ফালাইছি। তারা সবাই তখন হেসে ফেলেছিলেন। তাদের এমন আন্তরিকতা দেখে আর কথা শুনে আমারও খুব লজ্জা লাগছিল এই ভেবে যে, জহুর মামা, তোরাফ আলী আর খালা কতদিন আমাদের বাড়ি বেড়াতে গেছেন। আমরা কোনোদিন তাদের এমন খাতির-যত্ন করি নি। খাতির করেছি গফুর মামা কিংবা নূরু মাস্টারকে, ঘরে পৌঁছা মাত্র আম্মা তাঁদে পান কেটে দিতেন। কখনো রাতে বানিয়ে রাখা কলা বা তালের পিঠা খেতে দিতেন। গফুর মামার মতো এত সুন্দর করে জহুর মামাকে কোনোদিন তো আমি মামাও ডাকি নি। একজন বাওলিয়া, যার নিজের মাথা গুঁজার একটা ঠাঁই নেই তাঁর মন এত বড় হয় কীভাবে? তিনি তো তাঁর স্ত্রীকেও ভয় পান না। আমাকে খেতে দিতে বলায় গফুর মামাকে তাঁর স্ত্রী যে ধমক দিয়েছিলেন - আমার সারাজীবন তা মনে থাকবে। মামীর ভয়ে মামা কেমন শিয়াল বনে গিয়েছিলেন। অথচ খালাকে নিয়ে জহুর মামার মধ্যে কোনো টানাপোড়েন দেখি নি। তাহলে কি এ জন্যই গফুর মামাদের বাড়িটা শিয়াল বাড়ি নামে পরিচিতি?
সাপ্তাহিক একাত্তর
২১ জুন ০৬
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন