An article on world food crisis and hunger / by Gazi Saiful Islam

A rice field near gazi's house
খাদ্য সমস্যার বৈশ্বিকরূপ বিশ্লেষণ


গাজী সাইফুল ইসলাম


সুখী সমৃদ্ধশালী একটি ভবিষ্যত বিশ্ব গড়ে তোলার চিন্তার বিপক্ষে প্রধান যেসব প্রতিবন্ধক এখন বিশ্বের মানুষের দোরগোড়ায় জ্যান্ত দৈত্যের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে-ওগুলোর মধ্যে খাদ্য ও পানি সমস্যা অন্যতম। বিশ্বজুড়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য উচ্চহারে বৃদ্ধির কারণে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমশই যে তা ঘনিভূত হচ্ছে এ বিষয়ের ওপর আজকে আমি এ নিবন্ধে আলোকপাত করব। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সামপ্রতিক একটি হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার সময়ের পর খাদ্যজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে বসেছে। ২০০৮ সালে খাদ্যের মূল্য সূচেকর রেকর্ড ছিল ২৬৩ পয়েন্ট। আর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যবৃদ্ধি সেই সূচককে স্পর্শ করেছে। জাতিসংঘেরই আরেকটি রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে ১.০২ বিলিয়ন মানুষ অপুষ্ঠিতে ভোগছিল। গণহারে অপুষ্ঠি মানেই খাদ্যাভাব। ১৯৭০ সালের পর একসঙ্গে এতবেশি লোক আর কখনও খাদ্যাভাব মোকাবেলা করেনি। ওই সংস্থাটির মতে, খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার জন্য বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি, বৃদ্ধি পেয়েছে গৃহস্থালি পণ্যের মূল্য উচ্চহারে বৃদ্ধির কারণে, আয় কমে যাওয়ার কারণে। আরেকটি কারণ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া। অনেক দরিদ্র পরিবার পয়সার অভাবে পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে পারছে না। ১৯৯৬ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্ধ রোমে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন করেছিল এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যে, ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ক্ষুধার্ত লোকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনবে। ২০০০ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পুনরায় মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গওল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তারা ২০১৫ সালের মধ্যে অপুষ্ঠিতে ভোগা লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারে তাদের দৃঢ় ইচ্ছের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিল। আরও আগের, ২০০৩-২০০৫ সালের একটি স্টাডি থেকে দেখা গেছে এরূপ মূল্যবৃদ্ধির আগে ১৯৯০-১৯৯২ সালে মাত্র ৬ মিলিয়ন মানুষ প্রকট খাদ্য সমস্যার মুখোমুখি ছিল। এখন ২০১১ সালের তিনমাস ইতোমধ্যেই অতিক্রান্ত। কিন্তু যে তিমিরে বসে বিশ্বনেতৃবৃন্দ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছিলেন বিশ্বের বাস্তবতা আজও সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। বরং দিনে দিনে খাদ্যসংকট সহনশীলতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্মেলন করে বক্তৃতা, বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে না ইতোমধ্যে এটাও তারা বুঝে গেছে। সত্য বলতে, কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গৃহিত হচ্ছে না। তাহলে কী হবে? ওই সংস্থাটির আশঙ্কা, এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলে এ বছরের মাঝামাঝি সময়েই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। যদি না জরুরিভাবে পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহিত হয়-তবে খাদ্যের উচ্চ মূল্য মানবোন্নয়ন সূচকের ওপর দীর্ঘকালীন বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। অধিক মূল্যে খাদ্য কিনতে গিয়ে দ্ররিদ্র মানুষদেরকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে খরচ কমাতে হবে। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান আরও নিচে নেমে যাবে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা।
বহুবছর ব্যাপী যুদ্ধ চলার কারণে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দু'ধরনের প্রভাবই পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। বাস্তবতা এমন যে, ইরাকে, আফগানিস্তানে একধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। এবং বাস্তবতাদৃষ্টে মনে হয় দূর ভবিষ্যতেও তা চলতে থাকবে। খাদ্যজাত পণ্যের সংগ্রহে মধ্যপ্রাচ্যের বরাবরই আমদানী নির্ভর। তারা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য আমদানী করে থাকে। বেশিরভাগ দেশ চীন ও ভারতের উৎপাদিত খাদ্যপণ্যে তাদের উদর পূর্তি করতে হয়। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি এমন যে, এশিয়ারই অনেক দেশ তাদের খাদ্যের জন্য ভারতের মুখাপেক্ষি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই শোনা যায়, খোদ ভারতেই খাদ্যের অপ্রতুলতার কারণে মূল্য আকাশচুম্বি| তাহলে যেসব দেশ আমদানী নির্ভর-তাদের অবস্থা কল্পনাতীত। এখানে প্রসঙ্গত মিয়ানমারের কথা তোলা যায়। খাদ্য উৎপাদনে দেশটি একটি শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও রাজনৈতিক কারণে এর বৈশ্বিক অবদান জিরো।
এখন আবার মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান আরবিভাষী দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম এবং শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য প্রতিটি দেশে চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন। সে আন্দোলনে ইতোমধ্যেই কোনো দেশের সরকারের পতন ঘটেছে আর কোনো দেশের সরকার পতনের মুখে পড়েছে। আবার সেই আন্দোলনের সমর্থনে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর নিপীড়নমূলক আচরণের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের মেন্ডেট বাস্তবায়নের নামে পশ্চিমারা যুদ্ধ শুরু দিয়েছে আমেরিকান, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতৃত্বে। চলছে ভয়াবহ বোমা ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা। বহু অর্থ খরচে, বহু বছরের সাধনায় গড়ে তোলা বিশাল বিশাল লিবীয় অবকাঠানো নিমিষেই মিশে যাচ্ছে ধূলোয়। ভয়ে সে সবদেশে কর্মরত বিদেশি লোকেরা ( যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশের) কোনোরকমে জীবন নিয়ে পালাচ্ছে। ফলে একদিকে বিশ্বে যেমন হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে অন্যদিকে তেমনই চাকুরি হারানো মানুষেরা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের মানসিক ক্ষতিকে আর্থিক ক্ষতির মানদণ্ডে বিচার করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, স্বল্পকালীন সময়ে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কিছুতেই সম্ভব হবে না।
এছাড়া, বিশ্বের অনেক দেশের রয়েছে উদ্বাস্তু সমস্যা এবং দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছেই। বিশ্বে বর্তমানে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা কত বলা বোধহয় সত্যি কঠিন। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ ও ভূমিকম্পের কারণে প্রতিদিন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে জর্ডান, মিসরের যেমন সমস্যা, আফগান উদ্বাস্তুদের নিয়ে পাকিস্তানের সমস্যা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা। দু'তিনদিন আগে দেশীয় একটি দৈনিকের বিদেশ বিষয়ক পাতায় ছাপা হয়েছে আইভরি কোস্টে সাত থেকে দশ লাখ উদ্বাস্তু। তাদের বেশিরভাগ মানুষ আবিদজানের বাসিন্দা। এর চারপাঁচদিন আগে আমরা দেখেছি লিবিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে দলে দলে লোকেরা পালাচ্ছে। উদ্বাস্তুরা সাধারণত সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে নিষ্ঠুর দাবিদ্র্যের মধ্যে কোনো রকমে অস্তিত্ব রক্ষা করে। তারা আশ্রিত দেশের মূলধারার সঙ্গে মিশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ করতে পারে না। পারলেও তাদের সে অংশগ্রহণ হয়ে থাকে সীমিত আকারে। এভাবে দেখা যায় বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বাস্তু, যারা উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন, আহার্য যুগিয়ে যেতে হচ্ছে-মানবীয় কারণে। এমন মানবিক সমস্যার কারণেও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে। ইরাক, আফগানিস্তানের দীর্ঘদিনের যুদ্ধের সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে, লিবিয়া। সুদান সমপ্রতি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহুবছর পর গৃহাযুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে ওঠেছে বলা যায়। কিন্তু অর্থনীতি এখনও রয়ে গেছে হতদরিদ্রের পর্যায়ে। এখনও সেখানকার পথেঘাটে বুভুক্ষু মানুষদের দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদ্বাস্তুদের ঘরে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে বিশ্বের বোঝা অনেকাংশে লাঘব হয়। এ দায়িত্ব কেবল উন্নত বিশ্বই নিতে পারে।
বিশ্বজুড়ে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে আর কারা বেশি লাভবান হবে এ সম্পর্কেও আমাদের একটি ধারণা থাকা দরকার। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, ধনী দেশগুলো, কৃষিতে যারা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানি করার ক্ষমতা রাখে তারাই লাভবান হবে। মধ্যসত্ত্বভোগী, যারা খাদ্যজাত পণ্যের মজুতদার, যারা আমদানীকারক তারা লাভবান হবে। লাভবান হবে খাদ্যজাত পণ্যের পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা। আর প্রধানত ক্ষতিগ্রস্থ হবে হতদরিদ্র, ভূমিহীন আর মহিলাপ্রধান পরিবারগুলো। তাছাড়া যারা অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত, যেমন, যাদের নিত্যনৈমিত্তিক অর্থের কামাই নেই, যারা কম মূল্যে কৃষি, শিল্প ও কলকারখানায় মজুরি খাটে। বিশ্বে এমন লোকের সংখ্যাই বেশি।
তবে খুব বিস্ময়ের একটি ব্যাপার হলো, ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা এমন এক সময় বাড়ছে যখন বিশ্ব অধিকতর ধনী হচ্ছে, মানুষের বাসস্থানগুলো মসৃণ আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে আর আকাশচুম্বিসব অট্টালিকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। একইসঙ্গে খাদ্যজাত পণ্যের উৎপাদনও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। বিষয়টা বিপরীতমুখী হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল দিয়ে বিশ্বের লোকসংখ্যাও বাড়ছে। এশিয়ায় লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত লোকদের বাসস্থানের সংকুলান করতে গিয়েই প্রতি বছর এশিয়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুলসংখ্যক আবাদী জমি। জমিগুলো এমনভাবে আবাসিক এলাকায়, মৎসচাষে আর শিল্পকারখানার স্থাপনে, বিশেষায়িত শস্য উৎপাদনে নিয়োজিত হয়ে যাচ্ছে-যা এখন সবার দৃষ্টিতে পড়ছে। শুধু এক বাংলাদেশের বাস্তবায় চোখ রাখলেই সব পরিস্কার হয়ে যায়। প্রতিবছর শতশত হেক্টর জমি আবাসনখাতে চলে যাচ্ছে। সমপ্রতি এ কারণে সরকার একটি আইন করেছে, ফসলি জমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু কথা হলো, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে যেহেতু ভিয়েতনামের মতো পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, এখানে জমিন নষ্ট হবেই। ঘরবাড়ির অধিকার তো মানুষের মৌলক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই বলা যায়, খাদ্য সংকটের পেছনে রয়েছে আরও বহুবিধ সংকট। ২০১৫ সালের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন লোককে ক্ষুধামুক্ত করতে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। আর এ সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে হলে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ আদৌ কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
অন্যদিকে আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়া, সুদান, হাইতি যেহেতু গৃহযুদ্ধের শিকার, খাদ্যাভাব সেসব দেশে স্বাভাবিক ব্যাপার। উগান্ডা, রুয়ান্ডা এমনই আরও কিছু আফ্রিকান দেশ, দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে যেগুলোতে ঊনিশশো আশির দশকে এইডস মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এখনও সেসব দেশের অর্থনীতি মজভূত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। ওসব দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা এখনও প্রকট। দারিদ্র্যের কারণে ওসব দেশে পতিতার সংখ্যা বেশি এবং দারিদ্র্যের কারণেই তারা দেশান্তরে গমন করে কিংবা পাচার হয়ে যায়। আগে অস্বাভাবিক যৌনাচারকে মনে করা হতো এইডসের প্রধান কারণ। কিন্তু এখন দেখা যায়, দারিদ্র্যই এইডসের অন্যতম কারণ। বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্য পীড়িত আফ্রিকান দেশগুলোকেই এইডস মহামারীর আকার নিয়েছিল। তাদের সুযোগ ছিল না বিশুদ্ধ রক্তের আদান-প্রদানের, ইনজেকশনের ওয়ানটাইম সিরিঞ্জ ব্যবহারের। জাতিসংঘের সহযোগিতায় যখন থেকে ওসব দেশে শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে, নেয়া হয়েছে মানবিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ তখন থেকেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। একসময় মনে করা হতো, যথার্থ চিকিৎসা ও ওষুধ আবিষ্কৃত না হলে এইডসের কারণে একদিন ওসব অঞ্চল মানব শূন্য হয়ে পড়বে। কিন্তু এখন মনে করা হয়, এইডস নয়, অদূর ভবিষ্যতে যদি ওইসব দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে না পারে-তাহলে খাদ্যাভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এ কথা শুধু আফ্রিকার বেলায় প্রযোজ্য নয়-এশিয়ার বেলাতেও প্রযোজ্য।
খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রতিটি দেশকে উদ্যোগী হতে হবে। খাদ্য কেনার সামর্থ যেন প্রতিটি মানুষের সৃষ্টি হয়-এ জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের ব্যাংক ঋণ দিয়ে চাষাবাদকে উৎসাহিত করতে হবে। তারা যেন সময় বীজ ও সার পায় আর যেন পায় পশুখাদ্য। কোনো কোনো অঞ্চলে চাষাবাদ এখনও পশু নির্ভর। এর জন্য প্রয়োজন সুস্থসবল পশু। পশুকে সুস্থসবল রাখার জন্য পশুখাদ্য নিশ্চিন্ত করা প্রয়োজন। এসব পদক্ষেপের কারণে যদি পণ্যের উৎপাদন বাড়ে তাহলে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দামও কমবে। পণ্যের দাম কমার জন্য আরেকটি শর্ত অবশ্যই বিবেচ্য। তাহলো বাধাহীন, সঠিক মূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন পরিবহন সুবিধা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের পরিবহন ব্যয় অত্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। এটাকে বলে, ঘোড়ার চেয়ে লাগামের দাম বেশি। ঘাটে ঘাটে পরিবহন মালিক ও চালকদের পয়সা গুণতে হয়। ফলে পরিবহনে উচ্চমূল্য পরিশোধের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশে এই বাস্তবতা প্রকট।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম আরও কয়েক দফা বেড়ে যেতে পারে সামপ্রতিক সময়ের আরও ক'টি বিশ্ব ঘটনার কারণে। হাহতিতে সর্বকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের মাত্র কয়েকমাস পরেই জাপানের সর্বকালের সেরা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে-অত্যাধুনিক একটি শহর, মৃত্যু হয়েছে ১০,০০০ বেশি মানুষের। এরপর মাত্র সাতআটদিনের ব্যবধানে আরেকটি ভূকম্প হয়ে গেল মিয়ানমারে। সেখানেও বহু জনপদ গুড়িয়ে গেছে, প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। জাপানের ধ্বংস হওয়া অত্যাধুনিক শহরটির দুরাবস্থা দেখে বাংলাদেশের মতো দুর্বল অবকাঠামো ও ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশগুলোর মানুষ বড় অসহায়ত্ব বোধ করছে। এমন আশঙ্কার মধ্যেই আবার ফুকুশিমার পারমানবিক চূল্লি থেকে জলে-স্থলে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে চার হাজার গুণেরও বেশি মাত্রায় তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে-তা কত দূরের জনপদ পর্যন্ত ধাওয়া করে কিছুই বলা যায় না। এমন আশঙ্কার মধ্যে আর যা হো্ক মানুষ উৎপাদনশীল কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। পরামর্শ হলো, সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ছোটবড় সব দেশের সরকার প্রধানদের একটি জরুরি সম্মেলন করা। জলাবায়ু, খাদ্য, পানি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব সংকট মোকাবেলার জন্য একটি সমন্বিত তহবিল গড়ে তোলা-যা থেকে প্রয়োজনে সবদেশ সাহায্য পেতে পারবে।




গাজী সাইফুল ইসলাম: অনুবাদক, প্রাবন্ধিক
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর বিশ্লেষক। gazisaiful@gmail.com
বিঃ দ্রঃ
সবার প্রতি আহ্বান: আমার লেখাগুলো পড়ুন, মন্তব্য লিখুন এবং আপনার ছবিসহ সেন্ড করুন আমার ইমেইল ঠিকানায়। আমি ফেসবুকসহ আমার ব্লগে পোস্ট করে দেব আপনার ছবিসহ। গাজী সাইফুল ইসলাম, সেটেলমেন্ট প্রেস, তেজগাঁও, ঢাকা-১২০৮।
E-mail: gazisaiful@gmail.com   

কোন মন্তব্য নেই :