রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১১

গাজী সাইফুল ইসলামে দশটি ছড়া

আমার দেশের কথা


আমার দেশের গেরুয়া রঙ মাটি
যখন আমি হাতে নিয়ে
আমার আপন অঙ্গে মাখি
মনে হয় না তখন
এর চেয়ে আর কিছু আছে খাঁটি
আমার দেশের নদীর জলে নারী
কী অপরূপ-মাটির কলস
কাঁকে যায় সে যখন তখন
পরনে ছাই ছাপের
লালচে পাড়ে সবুজ সুতির শাড়ি
আমার মাঠের পাকা ধানের হাসি
সেতো গৃহে বধূর হাসি
সেতো ধূলি মাখা গায়ে
ছুটে চলা বালক
মেলায় কেনা তার তাল পাতার বাঁশি
আমার দেশের এমন গল্প তুমি
শুনবে আরও? চাইলে এমনই
বলে যাব দিন থেকে রাত
এক সাহসী মানুষ
মরতে পারি দেশের মাটি চুমি


বিজয় দিনের গল্প


বিজয় দিনের গল্প তোমায়
বলছি আমি শোনো
এখন থেকে পেছন দিকে
সাইত্রিশটি সাল গুনো
তখন এদেশ করত শাসন
পাকিস্তানি লোক
কথায় কথায় মারত গুলি
ঝাঁঝরা করে বুক
সুযোগ পেলেই ভীতু বলে
করত অপমান
কাঁদত তখন বাঙালিরা
না পেয়ে সম্মান
তারাই একদিন পাল্টে দিলো
ইতিহাসের সুর
বুলেট বিদ্ধ হয়েও করল
পাকিস্তানি দূর
বিজয় মিছিল পাগলা ঘণ্টি
নামল পথের পর
রেখো মনে দিবসটি সে
১৬ই ডিসেম্বর|


স্বাধীন দেশের মানুষ কেনো


স্বাধীন দেশের মানুষ কেনো
পাখির মতো হয় না;
দুচাখে নীল আকাশ ভরে
বিশাল হয়ে রয় না?


স্বাধীন দেশের মানুষ কেনো
ন্যায়ের পথে লড়ে না
অসহায়ের পক্ষ লয়ে
বীরের মতো মরে না?


স্বাধীন দেশের মানুষ কেনো
লোভকে তার নাশে না
শ্রদ্ধানত মনটি ভরে
দেশকে ভালোবাসে না?




স্বাধীনতার সীমা


পাখির মতন ¯স্বাধীন তুমি
ভাবছো কেনো মিছে
তার আকাশেও আছে দেয়াল
তাকায় খালি নিচে
একটুখানি গাছের ডালে
কিংবা তালের পাতা
তার দেখো না ছো্‌ট্ট বাসা
গুঁজছে সেথায় মাথা
গেলেও দূরে বিলের ধারে
কিংবা নদীর তীরে
সাঁঝের আগেই ফিরে যে সে
পাতার ছোট্ট নীড়ে
এমনি দেখো যায় না সেতো
অন্য কোনো দেশে
স্বাধীনতার এই সীমানা
মানতেই হবে শেষে
ভালোবাসার বাঁধোন বড়ো
সর্বদাই তা জেনো
পিতা-মাতা মাতৃভূমি
স্বর্গ সমান মেনো


শহরে


হোক না শহর ইট পাথুরে
জ্বলুক নিয়ন বাতি
এখানে তবু অনেক শিশু
পথেই কাটায় রাতি
এখানে মানুষ উড়ায় ফানুস
বস্তা ভরা টাকায়
পথের ধারে গরীব শিশু
রোগজরাতে হাঁপায়
কোথাও আবার পথ-ঘাট অচল
ভয়াবহ জটে
হাসপাতালে ঠাঁই হয় রোগীর
বারান্দার ওই চটে
আকাশ ছোঁয়া দালানগুলো
যাদের মাথার পরে
কেউই তারা চায় না ফিরে
দুখির ভাঙা ঘরে
আবর্জনার স্তূপের ওপর
হেলায় শিশু বাড়ে
হায়নারূপী ট্রাকের চাকা
কত যে প্রাণ কাড়ে


গাঁয়ে


হোক না শহর ইট পাথুরে
জ্বলুক নিয়ন বাতি
মনটা আমার কান্দে তবু
দূর গাঁয়ে চোখ পাতি
সেথায় থাকেন আম্মু আমার
কষ্ট নিয়ে বুকে
অশ্রু চোখেও তাঁর যে থাকে
মিষ্টি হাসি মুখে
যন্ত্রদানব সেই গাঁয়েতে
যায় না কভু তেড়ে
সুখের ঘরে দেয় না হানা
নেয় না জীবন কেড়ে
গাছের ছায়ায় ঘুমোয় সেথা
গামছা পাতা সুখ
এমন ঘুমে কাটে সবার
রোদে পুড়া দুখ


৮ ই ফাল্গুন


ইতিহাসের ছিন্নপাতা
উল্টে দেখো অল্প
পেয়ে যাবে দুখিনি এক
বর্ণমালার গল্প
বায়ান্‌নের ৮ই ফাল্গুন
পাক সেনারা তেড়ে
আসল হেথা নেবে বলে
মুখের ভাষা কেড়ে
কিন্তু জোয়ান বাঙালিরা
দৃপ্ত ক্ষোভানলে
কার্ফিউ ভেঙে নামল পথে
উর্দু রুখবে বলে
ভীতু বলে কথায় কথায়
যাদের দিত গালি
তারাই শেষে খেদাল তাদের
মুখে মেখে কালি


জীবন মানেই


জীবন মানেই চলতে থাকা
সত্য পথের পরে
জীবন মানেই লড়তে থাকা
অগ্নি শপথ করে
জীবন মানেই বাঁচতে শেখা
কঠিন মাটি চষে
জীবন মানেই ধরতে শেখা
ধৈর্যের রশি কষে
জীবন মানেই ভাঙা গড়া
রৌদ্র ছায়ার খেলা
জীবন মানেই জন্মমৃত্যু
দুঃখ সুখের খেলা


খুঁজি মায়ের মুখ


যেথায় থাকি যেমন থাকি
দুঃখ কিংবা সুখে
মুখটি মায়ের জেগেই থাকে
আমার ছোট্ট বুকে
দূর গাঁয়ের ওই নদীর তীরে
বাঁশঝাড়ের ছায়ে
পথের বাঁেক দাঁড়িয়ে থাকে
আমার প্রিয় মায়ে
ফিরবো আমি কোন ছুটিতে
তার থাকে না জানা
আশায় তবু রাত যে জাগে
মানে না কারো মানা
চাঁদ উঠিলে আকাশ কোলে
পানিতে ভরে চোখ
আমি তখন চাঁদের মুখে
খুঁজি মায়ের মুখে


ফুটায় যারা ফুল


গরীব বলে নিজকে তুমি
ভাবছো কেন খাটো
কিসের লাজে সদাই তুমি
নূব্জ হয়ে হাঁটো?
আকাশ তলে সূর্য জ্বলে
প্রতাপ কত তাঁর
তাই বলে কি চাঁদ তারারে
তুচ্ছ করে আর?
অল্প খেয়ে কষ্ট সয়ে
মানুষ যারা হয়
দেশের জন্য তারাই করে
অনেক বড় জয়
চোখের জ্বলে আগুন জ্বেলে
ফুটায় যারা ফুল
আমার দেশে এমনই কবি
জানো তো নজরুল?
ভাসান চরের চেগা মিয়া
ত্যাগের মহিমায়
ভাসানী নামে হলেন খ্যাত
ভোলা কি তারে যায়?
তাঁর মতো মজলুম নেতা
জন্মালে ঘরে ঘরে
ধন্য হতো দেশের মাটি
কাঁদত না কেউ পরে

কোন মন্তব্য নেই :